পরিবেশ বান্ধব উপায়ে নিরাপদ কলা চাষে সফলতা

Spread the love

তুষার ইমরান : বগুড়ার শিবগঞ্জ এবং জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে বিশ্বব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহযোগিতায় “সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)” প্রকল্পের আওতায় টিএমএসএস “পরিবেশ বান্ধব উপায়ে নিরাপদ কলা চাষ”শীর্ষক একটি উপ-প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এর আওতায় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, পরিবেশ ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা, মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগের মাধ্যমে কলার প্রদর্শনী প্লট স্থাপন এবং কলার ব্যাগিং পদ্ধতিতে নতুন জাতের টিস্যু কালচার চারা (জি-৯) চাষ করানো হচ্ছে যা অধিক ফলনশীল এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গত বছরের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে বগুড়া এবং নরসিংদী উভয় জেলার চাম্পা ও অনুপম কলাচাষীগণ ব্যপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও জি-৯ জাতের কলার একটি প্লটও ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি, যা চাষীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ রোধ কল্পে প্রকল্প হতে কলার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কমিউনিটি এবং মার্কেট পর্যায়ে ওয়েস্ট কালেকশন পয়েন্ট (ডাস্টবিন) স্থাপন করা হয়েছে। কলা সংগ্রহের পরে পরিত্যক্ত কলা গাছ জমিতে যত্রতত্র ফেলে না রেখে বর্তমানে কলাচাষীরা বর্জ্য সমূহ এসব ডাস্টবিনে রাখে। পরবর্তীতে বর্জ্য পঁচে জৈব সারে রুপান্তরিত হলে চাষীরা সেগুলো জমিতে ব্যবহার করে। শিবগঞ্জ অঞ্চলে পরিত্যক্ত কলার গাছ এখন আর ফেলনা নয় যা হতে ফাইবার (আঁশ) তৈরী করা হচ্ছে এবং সেই আঁশ হতে বিভিন্ন হস্তশিল্প (টেবিল ম্যাট, কলমদানী, গ্ল্যাস ঢাকনা) তৈরী করে স্থানীয় বাজারে বিক্রিসহ দেশের বাইরে রপ্তানী করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং এসইপি (কলাচাষ) উপ-প্রকল্পটি জিরো ওয়েস্ট প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মোকামতলার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মোঃ শাকিল আহমেদ জানান তিনি এসইপি প্রকল্প হতে ১,০০,০০০/- ঋণ নিয়ে এবং প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় ২২ শতক জমিতে ২৭০ টি নতুন জাতের টিস্যু কালচার কলা জি-৯ রোপন করেন এবং পরিবেশ উন্নয়নের অঙ্গীকার হিসেবে ০৩টি প্র্যাকটিস (ক) মাটি পরীক্ষা করে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, (খ) কলার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জমির কোনায় পীট/গর্ত তৈরী, (গ) কলায় কীটনাশক স্প্রে করার পরিবর্তে জৈব পচনশীল ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করেন। তার আয়-ব্যয়ের হিসাব মতে প্রথম ফলন পেতে ২২ শতক জমিতে খরচ হয়েছে ৪৬,৮০৫/- টাকা। কলার ঘাউর ও চারা (মুড়ি ফসলের) বিক্রি বাবদ পেয়েছেন ১,৫৪,১০০/- এবং তার নীট লাভ হয়েছে প্রায় ১,০৭,২৯৫/- টাকা। প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ ইসতিয়াক ইসলাম এর সাথে কথা বলে জানা যায় ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৪৫ জন চাষী নতুন জাত জি-৯ কলা চাষের আওতায় এসেছে। প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার উদ্যোগগুলো নিয়মিত দেখাশোনা করেন এবং যে কোন সমস্যায় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন যাতে করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে বাল্ক পরিমান নিরাপদ কলা উৎপাদনের ফলে সহজেই উচ্চতর বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে কৃষকেরা অধিক লাভবান হতে পারে। টিএমএসএস এর উপ-নির্বাহী পরিচালক-৩ জনাব সোহরাব আলী খান জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে এসইপি-কলা প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন একটি জাতের টিস্যু কালচার (জি-৯) কলা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এই কলা চাষে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয় না, কীটনাশকের পরিবর্তে আমরা ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি ফলে জমির উর্বরা শক্তি যেমন ঠিক থাকছে তেমনি ক্ষতিকর কোন বিষয় এই কলার মধ্যে নেই। যারা কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে ভয়ে থাকেন তাদের জন্য বলছি আমাদের জি-৯ কলাটি নিঃসন্দেহে খেতে পারেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাব আল মুজাহিদ সরকার বলেন, টিএমএসএস এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গে এই প্রথম নতুন একটি জাতের টিস্যু কালচার কলা জি-৯ এর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে আশানুরুপ ফল এসেছে। কলা লাভজনক এবং টেকসই কৃষি ব্যবসা হওয়ায় শিবগঞ্জ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কলার আবাদ বেড়েছে। এই নতুন জাতের “জি-নাইন” কলা চাষ কৃষকের জন্য খুবই লাভজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *